সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা চীনের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, যে সেখানকার হাসপাতালে মানুষ ভীর করছে । রোগীদের মধ্যে সবথেকে বেশি হলো শিশু । প্রায় সবাই শ্বাসকষ্ট রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে । বিশ্বের স্বাস্থ্য সংস্থা চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস এর হার পরীক্ষা করছে । এবং জানিয়েছেন যে চীন বা অন্য কোথাও অস্বাভাবিক খবর পাওয়া যায়নি । চীনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে তাদের স্বাস্থ্য সেবা চাপের মধ্যে নেয় ।
HMPV কী
এই ভাইরাসের ব্যাপারে প্রথম জানা যায় ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের সংকমনের পরীক্ষা করার সময় প্রথম এই ভাইরাসের ব্যাপারে জানতে পারেন । অবশ্যই গবেষনায় দেখা গিয়েছে ভাইরাসটি অবশ্যই ৬০ বছর আগে ছড়িয়েছে । এটি সাধারন জ্বরের মতোই । বেশীরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এই ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের উপরের দিকে সংকমিত হয় ।
লক্ষণ কি কি
কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৩-৫ দিনের মধ্যে তার শরীরে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে । এই ভাইরাসের সাধারন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে সে গুলো হলোঃ
জ্বর
সর্দি
নাক থেকে পানি পড়া
নাকবন্ধ ভাব
হাঁচি
কাশি
গলাব্যথা এবং
চামড়ায় র্যাশ ।
এক কথায় সাধারনত জ্বরের মতো । যা সাধারণত ২-৫ দিনের মধ্যে এমনিতেয় ঠিক হয়ে যায় । তবে লক্ষণ তীব্র হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে । এই ভাইরাস থেকে যে কারোর আরো কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে । সেই রোগ গুলো হলোঃ
ইনফ্লুয়েঞ্জা এ
ব্রঙ্কাইটিস
মাইকোপ্লাজমা
নিউমোনিয়া
অ্যাজমা এবং
কানের সমস্যার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে ।
শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী বা জটিল রোগে আক্রান্তরা সবচেয়ে ভাইরাসের সংক্রমনের ঝুঁকিতে থাকে । একারণে তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে । এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির জটিলতায় বা ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগে আক্রান্তরা এবং এর সাথে সিওপিডি, অ্যাজমা, ফাইব্রোসিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগীদের মধ্যে সংক্রমনের লক্ষণগুলো বেশি দেখা দিতে পারে । এমনকি তাদের মৃত্যুও হতে পারে । তাই লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা করা যাবে না ।সারাবছরে মানুষের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে । তবে সাধারানত শীত ও বসন্তকালে এই ভাইরাসে মানুষের শরীরে বেশী শনাক্ত হয় ।
কীভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়
HMPV মূলত হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আর একজনে ছড়ায় । আমেরিকার Central For Disease Control এবং ভারতের National Library Of Medicine এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে । এক কথায় কেউ যদি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয় তার হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে বা তার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে গেলে আর একজনেরও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে । সেই সাথে আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট লেগে থাকে এমন কোন স্থান । যেমনঃ
দরজার হাতল
লিফটের বাটন বা
চায়ের কাপ ইত্যাদি
এই জায়গা গুলো স্পর্শ করলে আরেকজনের মধ্যেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে ।
আরো পড়ুনঃ এয়ার টার্বুলেন্স কী? কেন হয়? কোন রুট ঝুঁকিপূর্ণ?
প্রতিরোধ
করোনা মোকাবেলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল একি প্রদক্ষেপে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব । যেমনঃ
বাইরে গেলে মাস্ক পড়া ।
২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোঁয়া ।
হাত দিয়ে নাক – মুখ স্পর্শ না করা ।
আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ।
ভিড় এড়িয়ে চলা ।
হাঁচি বা কাশি পেলে রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি দেওয়া ।
সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাওয়ার পাশাপাশি প্রযাপ্ত পানি পান করা । সেই সাথে আপনি যদি আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে চেষ্টা করবেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা । স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন মানুষ চাইলে জ্বরসহ অনন্য শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমন প্রতিরোধে টিকা নিতে পারেন । যুক্তরাজ্যর গর্ভবতী নারী এবং ৭৫-৭৯ প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ।
চিকিৎসা
এই ভাইরাসের জন্য বর্তমানে নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেয় বা বিশেষ কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেয় । চিকিৎসকরা সাধারণত লক্ষণ বুঝে তা উপশমের চেষ্টা করে থাকে । যেমন জ্বর হলে জ্বর কমানোর ওষুধ দেয় । সর্দি, গলাব্যথা বা শ্বাস নিতে সমস্যা হলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা বা ওষুধ দেওয়া হয় । চিকিৎসকরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও পানি জাতীয় খাবার খাওয়ার কথা বলেছে ।
তবে এই ভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন সাঙ্ঘাই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং বাংলাদেশের বায়োলজিস্টরা ।
আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু কি
বাংলাদেশের বায়োলজিস্টরা এবং যুক্তরাষ্ট্রের National central Disease For Control ও জানিয়েছেন HMPV নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেয় ।
এর বড় কারণ এটি কোভিডের মতো নতুন কোনো ভাইরাস নয় । বাংলাদেশে ২০১৬ – ২০১৭ সালের দিকে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছিলো । ভারত এবং চীনসহ বিভিন্ন দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ধার্যের এই ভাইরাসের আগেও মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল । এর অর্থ হলো মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এমিউনিটি গড়ে উঠেছে । এর মানে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একে মোকাবেলা করতে পারবে বলে মনে করা যায় ।
ইংল্যান্ডের মেডিকেল পল হান্টার বলেন প্রায় প্রতিটি শিশুই জম্মের পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত একবার HMPV- তে আক্রান্ত হবে এবং জীবনের বিভিন্ন সময়ে বহুবার পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে । তবে কোভিড ফুসফুসে যতটা ক্ষতি করে ততটা ক্ষতি HMPV ভাইরাস করে না বলেছেন বায়োলজিস্টরা ।