Health

যে যে কারণে ইম্পোস্টার সিনড্রোম হয় এবং ইম্পোস্টার সিনড্রোম থেকে বের হয়ে আসবেন

অফিসিয়ালি ইম্পোস্টার সিনড্রোমের শনাক্তের কোনো বৈজ্ঞানিক উপায় নেই । ব্যক্তির চিন্তার ধরন দেখে বিষয়টি আন্দাজ করে নেন বিষয়করা ।  ইম্পোস্টার সিনড্রোমের প্রধান লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি লক্ষণ হলো আপনি কোন ভালো কাজের জন্য পুরস্কার পেলে, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে , প্রমোশন পেলে বা কেউ প্রশংসা করলে অস্বস্তিতে পরে যান । কারণ আপনার মনে হতে থাকে আপনি এটার যোগ্য না । এই স্বীকৃতি অন্যায় ভাবে দেওয়া হয়েছে ।

এক কথায় আপনি আপনার মেধা ও শ্রমে কিছু অর্জন করলে , নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার উপরে অনেক সন্দেহহীন থাকেন । দ্বিতীয় লক্ষণ হল আপনার সবসময় মনে হয় আপনি খুব একটু বুদ্ধিমান না । আপনার তেমন কোন যোগ্যতা নেই । এবং আপনি প্রচন্ড আত্মসংসায়ে ভোগেন । কোন স্বীকৃতি ও প্রশংসা পেলে মনে হয় যে আপনি ভাগ্যের জোরে পেয়েছেন । আপনার কাজ কেমন হয়েছে সেটা মূল্যায়ন করা হতে পারে , এই ভেবে আপনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন । 

কেনো না আপনি ভয়ে থাকেন যেকোনো সময় আপনারা অযোগ্যতা ধরা পড়ে যেতে পারে । লক্ষণ হল আপনি সফলতা চান । কিন্তু সেই সফলতা পেলে আপনি আবার ভয় পেতে থাকেন । এই জন্য আপনি ভালো রেজাল্ট করে বা প্রমোশন পেয়েও খুশি হতে পারেন না । আপনার ভিতরে ভয় জন্মায় নতুন দায়িত্বের, ভয় খুন করার ভয়, অনিশ্চয়তার ভয় ।

 চতুর্থ লক্ষণ আপনার যেখানে কথা বলার প্রয়োজন সেখানে কথা বলতে পারেন । যেমন কেউ আপনাকে ছোট করে কথা বলছে আপনি তার প্রতিরোধ করতে পারেন না । কিন্তু বন্ধুকে অপমান করলে আপনি ঠিকই প্রতিরোধ করতে পারেন । জরুরী কোন মিটিংয়ে আপনি যে কাজটি করেছেন এবং শ্রম দিয়েছেন এগুলো বলতে পারেন না । আপনার কাজের কৃতিত্ব অন্য কেউ নিয়ে গেলেও চুপ করে থাকেন । কিংবা সামনে যে প্রজেক্ট আসছে এই কাজটি আপনি করতে চান এই জরুরী কথাগুলো বলতে পারেন না ।

 নিজের প্রতি সন্দেহের কারণে ইম্পোস্টার সিনড্রোম আক্রান্তরা নিজের প্রতিটি কাজ নিখুঁতভাবে করতে থাকেন । এভাবে এরা অন্যদের থেকে নিজের কাজের চাপ একটু বেশি নিয়ে থাকে । এই চাপ না নিলে নিজেকে অক্ষম ভাবতে শুরু করে । এখন মনে হতে পারে কোন কাজ নিখুত ভাবে করা তো ভালো কথা এবং সবাই তো উচিত । 

এজন্য বলে রাখি আর দশটা মানুষ যে কাজটি পারফেক্ট করবে ইম্পোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্তদের সেটি পারফেক্ট না । তাদের কাছে নিখুঁতের সংখ্যা অনেক জটিল । এই সিনড্রোমে আক্রান্তরা বারবার কাজ পিছানোতে ভুগতে পারেন । তাদের মধ্যে মানুষকে খুশি করার প্রবণতা কাজ করে । 

ইম্পোস্টার সিনড্রোমের ফলে কি হয়

নিজের আত্ম উন্নয়নের জন্য কিছু আত্ম সংশয় থাকা ভালো । কিন্তু ইম্পোস্টার সিনড্রোম খুব দ্রুত  আত্মবিনাসের দিকে ঠেলে দিতে পারেন ।

 সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ স্যান্ডি ম্যান বলেছেন যে তিনি  এ সমস্যায় আক্রান্ত অনেককে পেয়েছেন । যারা উঁচু মানের চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিতে চেয়েছেন । কারণ তাদের ভয় ছিল যদি অন্যরা তার সম্পর্কে জেনে যায় । অথচ তারা সঠিক পদ্ধতিতে যোগ্যতা অনুযায়ী তারা কাজ পেয়েছিলেন ।

 যারা সিনড্রোমে ভোগেন তারা ক্যারিয়ারে উপরের দিকে উঠার ক্ষেত্রে দ্বিধায় ভোগেন । কারণ তারা মনে করেন ইতিমধ্যে তারা অনেক উপরে উঠে গেছেন । প্রতিনিয়ত নিজের জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতার ব্যাপারে বার বার সন্দেহ করাই তার ভিতরে যে অসীম সম্ভবনা সেটা সব সময় অজানায় থাকে । নতুন কিছু করার উদ্যমই থাকে না । এতে করে আপনি যে কাজটায় ভালো সেই সক্রান্ত চাকরি, ব্যাবসা বা উচ্চশিক্ষার জন্য কিংবা প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আবেদনই করেন না । কিন্তু আপনি হয়তো চেষ্টা করলে খুব ভালো করতে পারতেন ।

 আপনি মিটিংয়ে আপনার আইডিয়া শেয়ার করেন না । কারণ আপনি আপনার আইডিয়াকে  যোগ্য বলে মনে করেন না । এভাবে ভালো ভালো সুযোগ আপনার হাতছাড়া হয়ে যায় । এসব কারণে ইম্পোস্টার সিনড্রোমে ভোগা ব্যক্তি মানসিক চাপ ও  উদ্ভেগের মধ্যে থাকেন । এবং অনেকেই বিষাদ গ্রস্ত হয়ে পড়ে ।

এই সিনড্রোম কাটিয়ে উঠবেন কীভাবে

গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইম্পোস্টার সিনড্রোম কর্মক্ষেত্রে খুব সাধারণ একটি সমস্যা । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যোগ্য ও মেধাবীরাই এই সিনড্রোমে ভুগে থাকেন । এ ক্ষেত্রে করণীয় হল নিজের সমস্যাকে নিয়ে বিশ্বস্ত কারো সাথে খোলা মেলা ভাবে কথা বলা । তখন আপনি জানতে পারবেন আপনি একা নয়, আপনার মত এমন অনেকেই আছে নিজের অর্জনকে খাটো করে দেখার প্রবণতা আছে ।

 অনেকেরই মাঝে মাঝে নিজেকে বোকা মনে হয় । এভাবে আপনি নিজের সংশয় কাটাতে পারবেন । নিজের অপূর্ণতা মেনে নিতে শিখবেন । কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে । এই ভুলকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে শিখবেন । পরিশেষে ভয় কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন । 

আপনি যদি অন্যের চোখে নিজেকে দেখেন তখন সেটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় বেশি । নিজেকে কখনো অন্যের সাথে তুলনা করবেন না । বরং আপনি আপনার গত বছরের কাজের সাথে এই বছরের কাজের তুলনা করুন । আপনার ব্যর্থতাকে গ্রহণ করুন । আপনার বিলিয়েন্ট হওয়ার দরকার নেই । এক ধাপ ভালো করতে পারলেও সফলতা । যখন আপনি জানবেন আপনার ইম্পোস্টার সিনড্রোম আছে । তখন আপনি সচেতন ভাবে আপনার ব্যাপারে মানুষের প্রশংসা বা স্বীকৃতিগুলো নীতিবাচক ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করবেন । 

আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে আপনি যা অর্জন করেছেন । সেটা মেধা বা যোগ্যতা কারণেই করেছেন । তখন আর প্রশংসা শুনলে বা পুরস্কার পেলে অস্বস্তি লাগবে না বরং খুশি লাগবে ।

নিজেকে হেয় করা বন্ধ করা

এক্ষেত্রে আপনি কোন শব্দগুলো ব্যবহার করছেন সেই দিকে মনোযোগ দিন । যেমন আমি এটি ভাগ্যর জোরে পেয়েছি বা দৈবক্রমে হয়েছে । অথবা তারা দয়া করে আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে । কিন্তু তাদের হয়তো কোথাও ভুল হয়েছে এই জন্য আমাকে পুরস্কৃত করেছে । এই স্বীকৃতি এমন কিছুই নয় যে কেউ পেতে পারে । এই কথাগুলো বলা এড়িয়ে যেতে হবে । এর চেয়ে নিজে বলুন আমি অনেক পরিশ্রম করার কারণে নিজের যোগ্যতা বলে  স্বীকৃতি পেয়েছি । তাই আজকের পর থেকে কেউ প্রশংসা করলে বা পুরস্কার দিলে তাকে ধন্যবাদ দিন ।

আপনি কেনো পেলেন আর কেউ পেলে ভালো হতো ,আমি কি যোগ্য কিনা এমন কথা বলবেন না । এক্ষেত্রে আপনি আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের যেসব সাফল্য অর্জন করেছেন সেইগুলো সবকিছু তালিকার মতো করে লিখুন । তা যতই ছোট হোক না কেন লিখুন এরপর লেখাগুলো পড়ুন । আপনি কোন কোন ক্ষেত্রে ভালো করেছেন তা নিয়ে ভাবুন এবং আপনার চারপাশের মানুষগুলোর সাথে আলোচনা করুন ।

 যখনই মনে হবে আপনি অযোগ্য তখন নিজেকে নিজে একটি বার্তা দিন । নতুন কিছু শুরু করার সময় সব মানুষই কিছুটা অপ্রস্তুত থাকে । আপনি এখন হয়তো অনেক কিছুর উত্তর জানেন না । কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু জানার সক্ষমতা এবং বুদ্ধি আপনার আছে ।মিটিংয়ে কথা বলতে গেলে বা প্রশ্ন করতে গেলে যদি জরতা হয় ,তাহলে আপনি কি বলবেন ,কিভাবে বলবেন ,সেটি একবার মাথার ভিতরে রিহার্সেল করে নিন । এতে আপনার নার্ভাসনেস অনেকটাই কমে যাবে । পারফরম্যান্স ভালো হবে । 

তবে সবচেয়ে ভালো হবে যদি কোন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন । তারা আপনাকে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার সব থেকে বেশি সাহায্য করতে পারবে ।

৫. শিশুদের ইম্পোস্টার সিনড্রোমঃ সাধারণত দুই ধরনের পরিস্থিতি শিশুদের মধ্যে ইম্পোস্টার সিনড্রোম তৈরি করতে পারে । এক হলো ক্রমাগত সমালোচনা এবং আর একটি হলো অতিরিক্ত প্রশংসা । যেসব বাবা মায়েরা বাচ্চাদের কেবল সমালোচনা করেন । রেজাল্ট করলেও বলেন আরও ভালো কেনো করনি । সেই শিশুর আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে যায় । তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও নিজের প্রতি বিশ্বাস আনতে পারে । আবার যে বাবা মায়েরা বাচ্চাদের অতিরিক্ত প্রশংসা করেন । যেমন বিশ্বের সবথেকে বুদ্ধিমান বাচ্চা , তুমি সব থেকে ভালো । এই মন্তব্য গুলো শিশুদের মধ্যে প্রত্যাশার চাপ তৈরি করতে পারে ।

 তারা সবার থেকে ভালো হওয়ার জন্য আরও  বেশি চেষ্টা করে । এবং তারা সবার থেকে ভালো হতে না পারলে তারা ভেঙে পড়ে । এজন্য অভিভাবকদের উচিত শিশুদের কাজের  ফলাফল কে নয়, বরং কিছু ভালো কিছু করতে নিজে যে চেষ্টাটা করছে সেটার  প্রশংসা করা । তাদের শক্তি এবং দুর্বলতার দিক গুলো বাস্তব সম্মত ভাবে বুঝতে সাহায্য করা । যেন তারা সফলতা বিশ্বাসে আত্মমর্যাদা হয় । আবার ব্যর্থতাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে । 

ইম্পোস্টার সিনড্রোম একবার কাটিয়ে উঠতে পারলে  আপনি নিজের অসীম সম্ভাবনা কাটিয়ে উঠতে পারবেন । যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার এবং সুযোগের সৎ ব্যবহার করার সাহস পাবেন । তাই যতটা দ্রুত সম্ভব নিজেকে সাহায্য করুন । তবে মনে রাখবেন সবকিছুর জন্য সময় প্রয়োজন । বিশেষ করে মনের অভ্যাস পরিবর্তন করতে , এই পদ্ধতি গুলো আপনি যত অনুশীলন করবেন ততই স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Exit mobile version