আপনি যদি দিনে ২-৩ বেলা খেয়ে থাকেন তাহলে একটা সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল হয়ে যায় । কেননা ভাত হলো সাধারণ শর্করা বা সিম্পল কার্বো-হাইড্রেড, যা রক্তে চিনির মাত্রা বারিয়ে দেয় । এবং এটি একটি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার । এই ক্যালরি না ঝরলে তা সেটা শরীরেই জমা হয় এবং এর ফলে ওজন বাড়ে । এছাড়া ভাতে খুব কম প্রোটিন রয়েছে । যার মানে ভাত খেলে পেশি বাড়ে না ।
এক্ষেত্রে ৬ টি উপায় মেনে চললে ভাত খেয়েই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন ।
পরিমান মতো খাওয়া উচিত
ভাতে রয়েছে অত্যন্ত উপকারী ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ । তাই ভাতকে শরীরের শত্রু ভাবার কোন কারণ নেয় । এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিমিত খাওয়া ।
হারবার্ড মেডিকেলের তথ্য মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের জন্য দিনে ৩০০ গ্রাম বা দুই কাপ ভাত খাওয়া স্বাস্থ্য সম্মত । তবে বেশি পরিশ্রম করলে এর পরিমাণ বাড়তে পারে ।
তবে পুষ্টিবানদের মতে, কেউ যদি ওজন কমাতে চাই । তাহলে দিনে ভাত খাওয়ার পরিমাণ ১৫০ গ্রাম বা এক কাপের মধ্যে রাখতে হবে । কেননা এই এক কাপ ভাতে ৫০০ ক্যালরি থাকে ,যা সহজে ঝরানো যায় । তবে ভাতের পরিমাণ হুট করে কমানো যাবে না ।
পুষ্টিবিদঃদের মতে, যারা দিনে ২-৩ বেলা খান তাদের উচিত হবে ভাত খাওয়া কিছু দিন ধরে অল্প অল্প করে কমিয়ে এক বেলায় নামিয়ে আনা । যদি দিনে দুই প্লেট ভাত খান তাহলে সেটা যথাক্রমে এক প্লেট, আধা প্লেট এবং তার পরে এক কাপে নামিয়ে আনতে হবে । এতে ভাত কমানো তার সাথে অভ্যস্ততা তৈরি হবে ।
এতো কম ভাত খেলে তো আর পেট ভরবে না । তাই অল্প ভাতের সাথে কম তেল দিয়ে রান্না করা ডাল, বেশি পরিমাণের শাঁক-সবজী, মাছ, ডিম ও সাদা মাংস যোগ করুন । এতে যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায় । তেমনি ক্যালরির হিসাবও ঠিক থাকে । ভাতের সাথে প্রয়োজনীয় প্রোটিন যোগ করা ভীষণ জরুরী । এজন্য মুরগীর মাংসর মতো চর্বিহীন প্রোটিন শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে ।
এজন্য একটু হিসাব করে খাওয়া-দাওয়া করলে ,ডায়েটে ভাত রেখে ওজন কমানো সম্ভব । এমনকি ডায়াবেটিসের রোগীও ভাত খেতে পারবেন । তবে মনে রাখবেন, আপনার ওজন অনুযায়ী ঠিক কতটা ভাত খেতে পারবেন । সেই হিসাবটা নিজে না করে একজন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিবেন ।
রান্নার ধরন কেমন হবে
ভাত খেয়েও ওজন কমানোর জন্য ভাত রান্নার ধরণ পরিবর্তন করার কথা বলেছেন পুষ্টিবিদঃরা । ভাত রান্না করে ভাতের ফ্যান ফেলে দিবেন । এতে ক্যালরি অনেকটায় বেড়ে যাবে । অবশ্যই এতে পুষ্টিগুলো বেড়িয়ে যাবে ।
প্রেসার কুকারে রান্না করা ভাতে স্টাজের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় । এই ভাত নিয়মিত খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে । তাই খোলা পাত্রে ভাত রান্না করায় ভালো । ফ্রাইড রাইস, খিচুড়ি, পোলাও ও বিরিয়ানির মতো তেলযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো ।
চালের ধরণ কেমন হবে
চাল পরিশোধন করে সাদা করার সময় শস্যর উপরে থাকা ফাইবারের আবরণ সরিয়ে ফেলা হয় । তাই এই চালের ভাত খেলে খুব একটা উপকার হয় না । ফাইবারের আবরণ সরিয়ে ফেলায় সাদা ভাতের এক ধরনের চিনির মাত্রা বেড়ে যায় । ফলে রক্তের চিনি বাড়ার আশঙ্কা থাকে । সেই তুলনায় লাল চালের ভাত বেশি উপকারী । কারণ এই চালে শস্যের ফাইবার অটুট থাকে । ফলে চিনি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন বাড়ার আশঙ্কা তেমন একটা থাকে না।
আরো পড়ুনঃ ভিসা ছাড়াই ঘুরে আসুন মালদ্বীপসহ ৪৬ টি দেশে
শর্করার ধরণ
মানবদেহে প্রয়োজন সুষম খাবার । সুষম খাবার হলো ৬ ধরনের খাবারের একটি মিলকরণ ।
১. শর্করা
২. আমিষ
৩. চর্বি
৪. ভিটামিন
৫. মিনারেলস
৬. পানি
খাদ্য তালিকার মধ্যে শর্করা আছে সবার উপরে । মানুষের শরীরের ক্যালরির চাহিদার প্রায় অর্ধেক আসে শর্করা থেকে । আর ভাত হলো শর্করার প্রধান উৎস । ভাতে ফাইবারের আবরণ না থাকায় এটি হলো Simple Carbo-Hydrate যা দ্রুত হজম হয়ে যায় । এ কারণে পরিপাক তন্ত্র দ্রুত শর্করাকে Glucose And Fructose এই দুই ধরণের চিনিতে ভাঙ্গে ।
এতে রক্তের চিনির মাত্রা বেড়ে যায় । এবং রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয় । যা চিনির মাত্রাও কমিয়ে দেয় । এ কারণে সাদা ভাত খেলে চিনির প্রভাবে হঠাৎ শক্তি বাড়ে । আবার ইনসুলিনের কারণে শক্তি কমে যায় । এছাড়া ভাত খেলে মেলাটোনিন এবং সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয় । যার কারণে ভাত খাওয়ার পরে ঝিমুনি লাগে । এক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় জটিল কার্বো-হাইড্রেট যুক্ত করা ওজন কমানোর একটি উপায় হতে পারে ।
জটিল কার্বোতে ফাইবার থাকায় হজম হতে এবং চিনিতে ভাঙ্গতে সময় নেয় । এতে করে শরীরে দীর্ঘ সময় শক্তি থাকে । তাই দিনে যদি একটি মাত্র কার্বো-হাইড্রেট খেতে হয় তাহলে লাল ভাত খাওয়া যেতে পারে । কেননা চাল সহ পুরো শস্যে জটিল কার্বো-হাইড্রেট আছে । এতে পেট দীর্ঘ সময় ভরা থাকে এবং ওজনও কমে । তবে ভাতের গ্লাইসেমিক সূচক রুটির চেয়ে বেশি । অর্থাৎ ভাত খাওয়ার পর বিদ্যমান চিনি হজম হয়ে যতক্ষণে রক্তের সাথে মিশবে, রুটির ক্ষেত্রে তা আরো কিছু দেরিতে মিশবে ।
তাই যাদের Gluten এ কোনো সমস্যা নেই, ওজন কমাতে তারা দিনে অন্য বেলায় রুটি খেতে পারেন । কারণ রুটি দেরিতে হজম হয় । এক্ষেত্রে দিনে এক বেলা ভাত এবং বাকি দুই বেলা রুটি, যব ও ওটস এগুলো খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন । এসব খাবারের ক্যালোরি ভাতের চাইতে কম । তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজ হবে ।
ফাইবারের প্রয়োজনীয়তা
ভাতের সাথে যদি বেশি যুক্ত ফাইবার খেতে পারেন তাহলে ওজন কমানো আরো সহজ হবে । এক্ষেত্রে উপায় হলো শাঁক-সবজীর পরিমাণ বারিয়ে দেওয়া । প্লেটে যত পরিমাণের ভাত নিবেন তার চেয়ে দিগুণ পরিমাণের শাঁক-সবজীর নিন । এর সাথে পুরো শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন । এভাবে একবারে প্রচুর পরিমাণের ফাইবার খেলে আপনার পরিপাক তন্ত্র পরিষ্কার থাকবে এবং ওজন কমবে ।
স্বাস্থ্য কমানোর জন্য ব্যায়াম করার প্রয়োজন
শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমানো যায় না । বরং প্রত্যেকদিন নিয়ম করে ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করাও জরুরী । কেননা ভাত উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার । তাই যত ক্যালোরি গ্রহণ করবেন সেটি খরজও করতে হবে । এক্ষেত্রে জিমে গিয়ে বিশেষজ্ঞের তথ্যাবধানে ঘাম ছড়াতে পারেন । তা না চাইলে দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, হাঁটা , সাইকেল চালানো ও সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত হেটে উঠার মতো শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন । এতে মেদ দ্রুত ঝরে যাবে ।
ভাত খাওয়ার পর পরই শুয়ে পরবেন না । চেষ্টা করুন ১৫-২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে । এতে তন্দরা ভাব কাটবে এবং চর্বি জমার সুযোগ থাকবে না । ঘুম কাঁটাতে Black Tea খেতে পারেন । যা ঘুম তাড়াবে এবং শরীরে মেদ জমতে দেবে না ।